অবশেষে করুণ পরিসমাপ্তি ঘটলো আটলান্টিকে ডুবো যাওয়া সাবমারসিবল ‘টাইটান’ উদ্ধার অভিযানের। মহাসাগরের নিচে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের কাছেই মিলেছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। মার্কিন কোস্ট গার্ড বলছে, ভয়াবহ বিস্ফোরণে টুকরো-টুকরো হয়ে যায় ডুবোযানটি। এতে সলিল সমাধি ঘটেছে পাঁচ আরোহীর। এ খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে স্বজনদের মাঝে। খবর সিএনএনের।
গত রবিবার ১৮ জুন থেকে টানা পাঁচদিন রোবট ডুবুরি আর বিশেষায়িত নয় জাহাজ চষে বেড়াচ্ছিলো আটলান্টিকের ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। মাঝে দু-একটি শব্দ শনাক্তের খবরে আশায় বুক বেঁধেছিলো সবাই। অনিশ্চয়তার অবসান ঘটবে, অপেক্ষা ছিলো সারা বিশ্বেরই। বৃহস্পতিবার ২২ জুন অবসান ঘটলো সবকিছুরই। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মার্কিন কোস্টগার্ড জানায়, আটলান্টিকের নিচে মিলেছে ডুবোযান টাইটানের ভাঙা কিছু অংশ। আর, সলিল সমাধি ঘটেছে ৫ আরোহীর।
মার্কিন কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল জন মোগের বলেন, হরাইজন নামের একটি আর্কটিক জাহাজের অনুসন্ধানী ডিভাইসগুলো প্রথম ডুবোযানটির ভাঙ্গা অংশগুলো শনাক্ত করে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৬শ’ ফুট দূরে মেলে সেসব। তাতেই বোঝা যায়, আকস্মিক ও ভয়াবহ এক দুর্যোগের কবলে পড়েছিলো সাবমারসিবলটি। আর, এ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে ৫ আরোহীর।
কোস্টগার্ড আরও বলছে, ভয়াবহ কোনো বিস্ফোরণে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় টাইটান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রোববার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়ই ঘটেছিলো বিস্ফোরণ। কারণ, সেদিন সোনার মেশিনে রেকর্ড হয়েছিলো একটি বড় শব্দতরঙ্গ। তবে, সাগরতলে কেনো বিস্ফোরণ ঘটলো, তার সুনির্দিষ্ট উত্তর জানতে প্রয়োজন আরও সময়ের।
রিয়ার এডমিরাল জন মোগের আরও বলেন, বিস্ফোরণটি ঠিক কখন বা কবে ঘটেছিলো সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। এই মুহুর্তে সেটা সঠিকভাবে বলাও বেশ মুশকিল। কারণ, গত ৭২ ঘণ্টায় আমরা শব্দতরঙ্গ পরিমাপের যে সোনার মেশিন বসিয়েছি; তাতে বিস্ফোরণের মতো কিছুই শনাক্ত হয়নি।
টাইটানের ৫ আরোহীর এমন করুণ পরিণতির খবরে শোকের ছায়া নেমেছে তাদেরর পরিবারে। পাঁচ আরোহীর মধ্যে ছিলেন, ধনাঢ্য পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহাজাদা দাউদ এবং তার ছেলে সুলেমান। ছিলেন, ব্রিটিশ ধনকুবের হারমিশ হারডিং ও ফরাসী অভিযাত্রী পল হেনরি। হতভাগ্যদের মধ্যে আছেন, ডুবোযানটির অন্যতম মালিক স্টকটন রাশও। তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এ অভিযানের।
বিশিষ্ট মার্কিন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ পল হানকিন বলেন, আমরা টাইটানের ৫টি ভাঙ্গা টুকরো পেয়েছি। যার অন্যতম- ডুবোযানের নাকের মতো অংশটি। পানির চাপ সহ্য করার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছিল এটি। এছাড়াও অনুসন্ধানে সন্ধান মিলেছে পোর্টহোল উইন্ডো ও ল্যান্ডিং ফ্রেমের ভাঙ্গা টুকরোর।
গুলোর মাধ্যমেই কীভাবে তারা দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন সেটির একটি সম্ভাব্য চিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, আটলান্টিকের তলদেশে ধ্বংস হওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার নিউফাউন্ড ল্যান্ডের কাছের সমুদ্রে ডুব দেয় টাইটান। কে জানতো বিশ্বখ্যাত টাইটানিকের মতোই করুণ পরিণতি ঘটবে এটিরও!